এসএসসি বিজ্ঞান সাজেশন্‌স – ২০২৫ইং

হৃদযন্ত্রের যত কথা

অধ্যায়-৩য়

রক্ত (Blood) :

  • রক্ত হলো লাল বর্ণের অস্বচ্ছ, ঈষৎ লবণাক্ত, কিছুটা ক্ষারীয় তরল যোজক টিস্যু বা কলা।
  • একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। যেটি মানুষের দেহের মোট ওজনের ৮%।
  • হিমোগ্লোবিন রক্তকে লাল করে এবং এটি অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে অক্সিহিমোগ্লোবিন তৈরি করে।

রক্তের উপাদান ও কাজ :

  • রক্তের প্রধান উপাদানগুলো হলো রক্তরস বা প্লাজমা এবং রক্তকণিকা।
  • সমগ্র রক্তের ৫৫% রক্তরস এবং বাকি ৪৫% রক্তকণিকা।
  • রক্তরসকে আলাদা করলে এটি হলুদ বর্ণের দেখায়।

রক্তরস বা প্লাজমা :

  • রক্তের তরল অংশকে প্লাজমা বলে।
  • রক্তরসের প্রায় ৯০% পানি, বাকি ১০% দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। বিভিন্ন রকমের জৈব ও অজৈব পদার্থ সৃষ্টি হয়।

অজৈব পদার্থ : সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্লোরিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, আয়োডিন ইত্যাদি খনিজ পদার্থের আয়ন।

জৈব পদার্থ : খাদ্যসার, রেচন পদার্থ, প্রোটিন, প্রতিরক্ষামূলক দ্রব্যাদি, নি:সৃত বিভিন্ন হরমোন, কোলেস্টেরল ইত্যাদি নানা ধরনের যৌগ।

রক্তরসের কাজ:

  • রক্তকণিকাসহ রক্তরসে দ্রবীভূত খাদ্যসার দেহের বিভিন্ন অংশে অতিবাহিত করা।
  • টিস্যু থেকে বর্জ্য পদার্থ নির্গত করে, সেগুলা রেচনের জন্য বৃক্কে পরিবহন করা।
  • রক্ত জমাট বাঁধার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পরিবহন করা।
  • হরমোন, এনজাইম, লিপিড প্রভৃতি দেহের বিভিন্ন অংশ বহন করা।
  • রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা।

সিরাম: রক্ত জমাট বাঁধার পর যে হালকা হলুদ রংয়ের স্বচ্ছ রস পাওয়া যায়, তাকে সিরাম বলে।

রক্তকণিকা: রক্তরসের মধ্যে ছড়ানো বিভিন্ন রকমের কোষকে রক্তকণিকা বলে। রক্তকণিকা প্রধানত তিন ধরনের। যথা:

          (ক) লোহিত রক্তকণিকা (Erythrocyte)

          (খ) শ্বেত রক্তকণিকা (Leukocyte)

          (গ) অনুচক্রিকা (Thrombocyte)

লোহিত রক্তকণিকা :

  • লোহিত রক্তকণিকা দ্বি-অবতল এবং চাকতির মত।
  • হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকে। যা দেখতে লাল বর্ণের।
  • একে Red Blood Cell বা RBC বলে।
  • এতে হিমোগ্লোবিন ভর্তি চ্যাপ্টা আকৃতির ভাসমান ব্যাগ থাকার কারণে অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে।
  • এই কণিকাগুলো বিভাজন হয় না, যা সবসময় অস্থিমজ্জার ভিতরে উৎপন্ন হতে থাকে এবং উৎপন্ন হওয়ার পর রক্তরসে চলে আসে।
  • মানুষের লোহিত রক্তকণিকার আয়ু প্রায় চার মাস অর্থাৎ ১২০ দিন। 
  • এটি প্লীহা তে সঞ্চিত থাকে এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে প্লীহা থেকে লোহিত কণিকা রক্তরসে সরবরাহ করে।
  • ভ্রূণ অবস্থায় দেহে ৮০-৯০ লাখ, শিশুর দেহে: ৬০-৭০ লাখ, পূর্ণবয়স্ক পুরুষ দেহে ৪.৫-৫.৫ লাখ এবং পূর্ণবয়স্ক নারীর দেহে ৪.৫-৫.০ লাখ।

লোহিত রক্তকণিকার কাজ:

  • দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা।
  • নিষ্কাশনের জন্য কিছু পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইডকে টিস্যু থেকে ফুসফুসে বহন করা।
  • হিমোগ্লোবিনের সাহায্যে রক্তের অম্ল-ক্ষারের সমতা বজায় রাখার জন্য বাফার হিসেবে কাজ করা।

শ্বেত রক্তকণিকা:

  • এটির নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই। এগুলো হিমোগ্লোবিনবিহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকাররের কোষ।
  • এর গড় আয়ু ১-১৫ দিন।
  • এদের মধ্যে হিমোগ্লোবিন না থাকাতে while Blood Cell বা WBC বলে।
  • এরা অ্যামিবার মতো দেহের আকার পরিবর্তন করে।
  • এরা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণুকে ধ্বংস করে।
  • মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে ৪-১০ হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে।
  • এ কণিকায় DNA অবস্থান করে।

প্রকারভেদ:

শ্বেত রক্তকণিকা
অ্যাগ্রানুলোসাইট বা দানাবিহীন গ্রানুলোসাইট বা দানাযুক্ত
১. সাইটোপ্লাজম দানহীন ও স্বচ্ছ।
২. এই কণিকায় ২ ধরনের। যথা: লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট।
৩. দেহের লিম্ফনোড, টনসিল, প্লীহা অংশে লিম্ফোসাইট তৈরি হয়।
৪. লিম্ফোসাইটগুলো বড় নিউক্লিয়াস যুক্ত ছোট কণিকা।
৫. মনোসাইট ছোট, ডিম্বাকার ও বৃক্কাকার নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট বড় কণিকা।
৬. লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং এই অ্যান্টিবডির দ্বারা দেহে প্রবেশ করা রোগ জীবানু ধ্বংস করে।
৭. মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগ জীবাণু ধ্বংস করে।   
১. এদের সাইটোপ্লাজম সূক্ষ্ম দানাযুক্ত।
২. এই কণিকা তিন প্রকার। যথা: নিউট্রোফিল, ইত্তসিনোফিল ও বেসোফিল।
৩. নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে।
৪. ইত্তসিনোফিল ও বেসোফিল হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নি:সৃত করে দেহে এলার্জি প্রতিরোধ করে।
৫. বেসোফিল হেপারিন নি:সৃত করে রক্তকে রক্তবাহিকার ভেতরে জমাট বাঁধা দেয়।

অনুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট:

  • ইংরেজিতে এদেরকে প্ল্যাটেলেট বলে।
  • এগুলো গোলাকার, ডিম্বাকার অথবা রড আকারের হতে পারে।
  • এদের সাইটোপ্লাজম দানাদার এবং সাইটোপ্লাজমে কোষ অঙ্গাণু-মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বস্তু থাকে।
  • এরা নিউক্লিয়াসবিহীন।
  • এদের গড় আয়ু ৫-১০ দিন।
  • মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা প্রায় ২.৫ লাখ।

অনুচক্রিকার কাজ:

  • প্রধান কাজ রক্ত জমাট বাঁধানোতে সাহায্য করা।
  • এতে ফাইব্রিন নামক একধরনের অদ্রবনীয় প্রোটিন থাকে যা ক্ষত স্থানে জমাট বাধেঁ এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।
  • এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ভিটামিন K ও ক্যালসিয়াম আয়ন জড়িত থাকে।

রক্তের সাধারণ কাজ:

  • শ্বাসকার্য: রক্ত অক্সিজেনকে ফুসফুস থেকে টিস্যু কোষে এবং টিস্যু কোষ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ফুসফুসে পরিবহন করে।
  • হরমোন পরিবহন: অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে নি:সৃত হরমোন দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করে।
  • খাদ্যসার পরিবহন: দেহের সঞ্চয় ভান্ডার তেকে এবং পরিপাকৃত খাদ্যসার দেহের টিস্যু কোষগুলোতে বহন করে।
  • বর্জ্য পরিবহন: নাইট্রোজনেঘটিত বর্জ্য পদার্থগুলোকে কিডনি বা বৃক্ক পরিবহন করে।
  • উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ: দেহে তাপের বিস্তৃতি ঘটিয়ে দেহের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • O গ্রুপের রক্তকে বলা হয় ইউনিভার্সাল ডোনার বা সার্বজনীন দাতা।
  • AB গ্রুপের রক্তকে বলা হয় ইউনিভার্সাল একসেপ্টের বা গ্রহীতা ।

Rh ফ্যাক্টর: রেসাস নামের বানরের লোহিত রক্তকণিকায় এক ধরনের অ্যান্টিজেন রয়েছে যেটি অনেক মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় পাওয়া যায়। এই নাম অনুসারে এক Rhesus Factor বা Rh ফ্যাক্টর বলে।

রক্ত সঞ্চালন: মানবদেহে রক্ত সংবহন করার সময় যে প্রক্রিয়াতে রক্ত নালীসমূহের মধ্য দিয়ে হৃদপিন্ড থেকে বের হয়ে সমস্ত শরীরে বাহিত হয়ে পুনরায় হৃদপিন্ডে ফিরে আসে তাকে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বলে।

হৃদপিন্ড (Heart): দুটি ফুসফুসের মধ্যে এবং ডায়াফ্রাম (মধ্যচ্ছেদ পর্দা) এর উপর থোরাক্সে অবস্থিত। পেরিকার্ডিয়াম নামক ২ স্তর বিশিষ্ট পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এর আকৃতি কোণের ন্যায় এবং ৪টি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। যথা:

          (ক) ডান অলিন্দ (Right Atrium)

          (খ) ডান নিলয় (Right Ventricle)

          (গ) বাম অলিন্দ (Left Atrium)

          (ঘ) বাম নিলয় (Left Ventricle)

ধমনি (Urtary) : যে সব রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত হৃৎপিন্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে বাহিত হয়, তাকে ধমনি বা আর্টারি বলে। বৈশিষ্ট্য :

  • ধমনি প্রাচীর পুরু এবং তিনটি স্তরে গঠিত।
  • এদের কোষ গহ্বর ছোট।
  • কপাটিকা থাকেনা বলে ধমনি দিয়ে রক্ত বেগে প্রবাহিত হয়।
  • এদের স্পন্দন আছে।

শিরা : যেসব রক্তনালির মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড পূর্ণ রক্ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে, তাদের শিরা বলে। বৈশিষ্ট্য :

  • শিরার প্রাচীর ধমনীর প্রাচীরের তুলনায় পাতলা।
  • শিরায় শ্বেত যোজক কলা বেশি পরিমান থাকে।
  • কপাটিকা থাকায় শিরা দিয়ে রক্ত ধীরে ধীরে একমুখে প্রবাহিত হয়।

www.eporashuna.com

Free PDF Download

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *